গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে ইলন মাস্ক জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের কোনো একসময়ে নিউরালিংক মানবদেহে চিপ স্থাপন করবে।

মানব মস্তিষ্কে চিপ বসানোর জন্য অনেক দিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য পরিচালক নিয়োগ দিচ্ছে নিউরালিংক।

যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন ডিভাইস ট্রায়ালের আগে সাধারণত ট্রায়াল ডিরেক্টর নিয়োগ করে থাকে।

 

ধারণা করা হচ্ছে, নিউরালিংক মানব মস্তিষ্কে চিপ স্থাপনের খুব কাছাকাছি চলে গেছে।

ডিরেক্টরের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিকে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে সৃজনশীল একদল ডাক্তার ও উচ্চমানের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে ইলন মাস্ক জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের কোনো একসময়ে নিউরালিংক মানবদেহে চিপ স্থাপন করবে।

যদিও ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরই ইলন মাস্ক বলে আসছেন মানবদেহে চিপ স্থাপনের কথা। সম্ভবত এ বছরই বাস্তবে রূপ পাচ্ছে মাস্কের স্বপ্নের।

ইতিমধ্যে শূকর ও বানরের মস্তিষ্কে নিউরালিংক ডিভাইস সফলতার সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, ডিভাইসটি স্থাপন ও অপসারণ সম্পূর্ণ নিরাপদ।

গত বছরের এপ্রিলে নিউরালিংক পেইজা নামের এক বানরের ভিডিও প্রকাশ করে। যেখানে দেখা যায়, কোনো ধরনের স্পর্শ ছাড়াই মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে পেইজা কম্পিউটারে পিংপং গেম খেলছে।

ভিডিওটিতে দেয়া ভয়েসওভারে বলা হয়, ‘নিউরালিংক তার ব্রেইন চিপের মাধ্যমে বানরের মোটর কর্টেক্স অঞ্চলে প্রতিস্থাপন করা দুই হাজারের বেশি সূক্ষ্ম তারের ইলেকট্রোড ব্যবহার করে মস্তিষ্ক থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত রেকর্ড ও ডিকোডের কাজ করে, যা সরাসরি কম্পিউটার ডিভাইসে প্রেরণ করে।’

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ডিভাইসটি ভবিষ্যতে মানুষের মস্তিষ্কসংক্রান্ত বহু সমস্যার সমাধান করবে। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা, ব্রেইন ড্যামেজ, হতাশা, উদ্বেগ ও আসক্তির মতো সমস্যার সমাধান ছাড়াও বিভিন্ন নিউরোসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবে।

এ ছাড়া প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিও স্পর্শ ছাড়াই মোবাইল, কম্পিউটারের মতো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে।

তবে ইলন মাস্কের দাবি আরও বিস্তৃত। ভবিষ্যতে নতুন কোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কিংবা কোনো দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে নিউরালিংক ডিভাইস মুহূর্তে তা মস্তিষ্কে আপলোড করে দেবে। এমনকি ব্রেইনকে কপি করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদী মাস্ক।

নিউরালিংক ব্রেইন মেশিন ইন্টারফেস (বিএমআই) বা ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। এ ধরনের প্রযুক্তিতে মানব মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি কম্পিউটারের সংযোগ করে দেয়া হয়। ফলে শুধু মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করা সম্ভব।

ইতিমধ্যে বানর ও শূকরের মধ্যে ডিভাইসটি স্থাপন করে সফলতা পাওয়া গেছে। পেইজা নামের বানরটি নিউরালিংক ডিভাইসের মাধ্যমে নিজের মনকে কাজে লাগিয়ে পিংপং বল নামের গেম খেলতে সক্ষম হয়। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে

নিউরালিংক ডিভাইস মূলত ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি মানব মস্তিষ্ককে সরাসরি কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দিতে পারে। ফলে কোনো শারীরিক কর্মকাণ্ড ছাড়াই শুধু চিন্তা করে কম্পিউটারের মতো ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা